রবিবার ১৯ মে ২০২৪
Online Edition

বাতিল হওয়া প্রাথমিকের বৃত্তির ফল প্রকাশ 

স্টাফ রিপোর্টার : প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে স্থগিত হওয়া প্রাথমিকের বৃত্তির ফল গত বুধবার রাতে প্রকাশ করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই)। এতে মোট প্রাপ্ত বৃত্তির সংখ্যার পরিবর্তন হয়নি। ফলে আগের তালিকায় নাম থাকা অনেকেই সংশোধিত তালিকা থেকে বাদ পড়বে। কারিগরি ত্রুটির কারণে যোগ্য যারা বাদ পড়েছিলেন নতুন করে তারা তালিকায় যুক্ত হয়েছেন। এতে নতুন করে অনেকের মুখে হাসি ফুটলেও, অনেকের মুখ মলিন হবে। এদিকে কোমলমতি শিশুদের পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর এভাবে তা বাতিলের ঘটনায় সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি সচেতন মহলে নিন্দার ঝড় উঠেছে। এমনিতেই সুশীল সমাজের আপত্তি উপেক্ষা করে এই তড়িঘড়ি করে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া আগে থেকেই পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন আর ফল প্রণয়নের নীতিমালা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।

এর আগে মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ফল প্রকাশের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। পরে কারিগরি ত্রুটি ধরা পড়ায় ৪ ঘণ্টার মাথায় বিকাল ৫টা ২ মিনিটে তা স্থগিত করা হয়। এরপর প্রথমে আগের তৈরিকৃত ফল ফেলে দেওয়া হয়। পাশাপাশি নতুন করে গোটা ফল তৈরি করা হয়। এ কাজে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েটে) একজন অধ্যাপক উপস্থিত থেকে সহায়তা করেন।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর জানিয়েছে, সংশোধিত ফলাফলই চূড়ান্ত ফলাফল। এতে কেউ সংক্ষুব্ধ হয়ে ফলাফল চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ নেই। কারণ বৃত্তির ফলাফলে চ্যালেঞ্জ করার কোনো বিধান নেই।

ডিপিই থেকে জানা গেছে, পঞ্চম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষায় দেশের ৫ লাখ ৩৬২ জন নিবন্ধন করলেও সেখান থেকে ৪ লাখ ৮২ হাজার ৯০৪ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। তাদের মধ্যে ৮২ হাজার ৩৮৩ জনকে ট্যালেন্টপুল ও সাধারণ কোটায় বৃত্তি দেওয়া হয়। এর মধ্যে ট্যালেন্টপুলে (মেধাবৃত্তি) ৩৩ হাজার ও ৪৯ হাজার ৩৮৩ জন শিক্ষার্থী সাধারণ বৃত্তি পেয়েছে।

গত মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো জাকির হোসেন এ ফলাফল ঘোষণার চার ঘণ্টা পরেই কারিগরি বিপর্যয় ঘটায় ফলাফল স্থগিত করা হয়। এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হলে তা তদন্ত করে দেখতে ৪ সদস্যের কমিটি করা হয়। 

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ‘দায়িত্বহীন কর্মকা-ের’ জন্য এখন হাজারো শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হয়েছে। 

মঙ্গলবার ফলাফল প্রকাশের দেখা যায়, পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে বৃত্তি পেয়েছেন পেয়েছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। বগুড়ার গাবতলী উপজেলার পাঁচপাইকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছিল এক শিক্ষার্থী। কিন্তু সে পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। কিন্তু তাকেও বৃত্তি (সাধারণ কোটা) পাওয়ার তালিকায় রাখা হয়েছে। এ রকম আরও ঘটনা ঘটেছে।

যেভাবে ফল জানা যাবে: বৃত্তি পরীক্ষার ফল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট এবং মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট, স্থানীয়ভাবে বিভাগীয় উপ-পরিচালকের কার্যালয়, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় এবং উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় থেকে পাওয়া যাবে।

এছাড়া মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমেও ফল জানা যাবে। DPEThana/Upazila Code No.Roll Number-Year and Send to 16222

২০২০ ও ২০২১ সালে করোনা মহামারির কারণে প্রাথমকি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা না হওয়ায় প্রাথমিক বৃত্তি প্রদান করা সম্ভব হয়নি। ২০২২ সালের ২২ নভেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় ২০২২ সাল থেকে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর সারা দেশে একযোগে বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

যেভাবে বৃত্তির ফল তৈরি হয় : ফলাফল তৈরি সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা জানান, বৃত্তি পরীক্ষা গ্রহণের পর জেলা শিক্ষা অফিসে শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্রে কোড দেওয়া হয়। এরপর শিক্ষকরা সেই খাতা মূল্যায়ন করেন। ফলে কার খাতা কোনটি তা বোঝা যায় না। কিন্তু মূল্যায়নের পর প্রাপ্ত নম্বর কোড অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন নম্বরে যোগ হয়। শেষের প্রক্রিয়াকে বলা হয় ডিকোডিং। এই কোডিং ও ডিকোডিং প্রক্রিয়ায় ভুল হয়েছে। ঝিনাইদহের শৈলকুপাসহ কয়েকটি উপজেলায় সব শিক্ষার্থীকে একই কোড নম্বর দেওয়া হয়েছে বলে ডিপিইর কম্পিউটার সেলে ধরা পড়েছে। এ কারণে সারা দেশের ফল পুনরায় যাচাই করার জন্য ফল স্থগিত করা হয়।

 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ